1. shadhinsomoy.com@gmail.com : স্বাধীন সময় : স্বাধীন সময়
  2. info@www.shadhinsomoy.com : স্বাধীন সময় :
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৯ অপরাহ্ন

শেখ হাসিনার প্রভাব খাটিয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা গ্রাস নাসা নজরুলের

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫

রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক খাত থেকে নামে-বেনামে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদার। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি ঋণও খেলাপি হওয়ার পথে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতদিন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঋণখেলাপির বাইরে ছিলেন তিনি। এবার আর শেষ রক্ষা হলো না। এই প্রথমবার তাকে ঋণখেলাপির তালিকায় দেখা যাচ্ছে। তাদের মতে, ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বেশ ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেটিকে পুঁজি করে ব্যাংক খাতে এসব অপকর্ম করেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। তিনি বেসরকারি সব ব্যাংকের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রাপ্ত তথ্যমতে, নাসা গ্রুপ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ২২টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। এর মধ্যে শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকেই বের করা হয় ৩ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এ ঋণের একটি অংশ খেলাপি হয়ে গেছে। এছাড়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে নিয়েছেন প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মহাখালী শাখা থেকে আফসার রিসোর্টের নামে ৪৮০ কোটি, মেয়ে আনিকার নামে ২১০ কোটি এবং বনানী শাখা থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা নিয়েছেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পুরো টাকাই শেষ ধাপের (মন্দমান) খেলাপি হয়ে গেছে। এছাড়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ২৬৫ কোটি টাকা। এর একটা অংশ বেনামি ঋণ। এ টাকা পুনঃতফশিল করে নিয়মিত দেখাচ্ছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ১ হাজার ৯৬১ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। এসব ঋণ নাসা গ্রুপ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ছয়টি প্রতিষ্ঠানের নামে বের করা হয়।

আইএফআইসি ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে নাসা এবং এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট চারটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ ১ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এসব ঋণ পায় সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সখ্য থাকার কারণে। আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক থেকে ৫৯০ কোটি এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ৪৫৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন মজুমদার। এসব ঋণ বের করা হয় উভয় ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে। এছাড়া ডাচ্-বাংলা থেকে ২৪৫ কোটি, উত্তরা ব্যাংক থেকে ১২০ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ইসলামি শাখা থেকে ২৪ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ১৪ কোটি, যমুনা ব্যাংকের মহাখালী শাখা থেকে ৫৭ কোটি, পূবালী ব্যাংকের মহাখালী করপোরেট শাখা থেকে ২২ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে ২১ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ৩৪ ও কাওরান বাজার শাখা থেকে ২৭৩ কোটি, এনআরবিসি ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ২১ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ২৬৮ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটির মহাখালী শাখা থেকে ৫৩১ কোটি ও গুলশান শাখা থেকে ২৩৫ কোটি, ব্যাংক এশিয়ার গুলশান লিংক রোড শাখা থেকে ৬৯ কোটি, সিটি ব্যাংক থেকে ২৫৪ কোটি এবং ইউসিবি ব্যাংক থেকে ৯০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। এর বাইরে সরকারি নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) থেকে ৬২ কোটি টাকার ঋণ নেন তিনি। এছাড়া রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জনতা ব্যাংক থেকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ২৬১ কোটি টাকা সুদ মাফ করে নেন নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার।

তবে তিনি সবচেয়ে বেশি ঋণ নেন ইসলামী ব্যাংক থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকের এক শাখা (লোকাল অফিস) থেকেই নাসা গ্রুপ নিয়েছে ২ হাজার ১০২ কোটি টাকা, যা এখন মুনাফাসহ অনেক বেড়ে গেছে। এর মধ্যে ৯৯৮ কোটি টাকা নিয়েছেন বিশেষ বিবেচনায়। বাকি ১ হাজার ১০৪ কোটি টাকা নিয়মিত ঋণ হিসাবে দেখানো হয়।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ইসলামী ব্যাংকের লোকাল অফিসে নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা তাইপে ডেনিমসের ঋণের অঙ্ক ২৮৮ কোটি টাকা। এ ঋণের ১৪৪ কোটি টাকাই নেওয়া হয় বিশেষ বিবেচনায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি ঋণ নিতে পারত। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাব খাটিয়ে প্রাপ্যতার চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ ঋণ নিয়ে নেন। বর্তমানে এসব ঋণের ৫১ কোটি টাকা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, একই অবস্থা নাসা স্পিনিং লিমিটেডের ১৬৩ কোটি টাকার ঋণেও। প্রতিষ্ঠানটিকে বিশেষ বিবেচনায় দেওয়া হয় প্রায় ৭ কোটি টাকা। বর্তমানে ওই ঋণের ২৩ কোটি টাকাই মেয়াদোত্তীর্ণ। এছাড়া নাসা স্পিনার্স লিমিডেটের ঋণের অঙ্ক ৬০ কোটি টাকা। এ প্রতিষ্ঠানকেও ৭ কোটি টাকার ঋণ বিশেষ বিবেচনায় দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের অঙ্ক ১৮ কোটি টাকা।

প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা যায়, নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা সুপার গার্মেন্টের বর্তমান ঋণের অঙ্ক ২৩৪ কোটি টাকা। এসব ঋণের সাড়ে ৯ কোটি টাকা বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে বিশেষ বিবেচনায় দেওয়া হয় ২০ কোটি টাকা। আর নাসা সুপারওয়াশ লিমিটেডের ঋণের অঙ্ক ২০৯ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের পরিমাণ ১৩ কোটি টাকা।

এছাড়া নাসা অ্যাপারেলস লিমিটেডসহ আরও ১২ প্রতিষ্ঠানকে ইসলামী ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে দেওয়া হয় ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। এই ঋণের মধ্যে ৬৬৮ কোটি টাকাই বিশেষ বিবেচনায়। বর্তমানে এসব ঋণের প্রায় শতকোটি টাকা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত অর্থ সংগ্রহকারী ব্যাংকিং খাতের চাঁদা সংগ্রাহক হিসাবে পরিচিত নজরুল ইসলাম মজুমদার ইসলামী ব্যাংকে ২০১৭ সালের পর থেকে ঋণের অঙ্ক বাড়িয়েছেন। এর আগে গ্রাহক থাকলেও ঋণের পরিমাণ ছিল যৎসামান্য। এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটি দখলে নেওয়ার পর থেকে মজুমদার প্রভাব খাটিয়ে নিজেও ঋণ নিতে শুরু করেন। মজুমদারের ঋণ মূলত দেওয়া হয়েছে লোকাল অফিস থেকে। এভাবে ব্যাংক ঋণের টাকায় দেশে যেমন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, তেমনই বিদেশে স্ত্রী-কন্যাসহ নিজের নামে কোম্পানি খুলে ব্যবসার আড়ালে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে এই ব্যাংকখেকোর বিরুদ্ধে।

বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনার নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের চাঁদা তুলতেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। কখনো মুজিববর্ষ, কখনো হাসিনার জন্মদিন, আবার কখনো শেখ রাসেল বা শেখ কামালের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের নামে চাঁদা তুলতেন তিনি। এছাড়া ব্যাংক খাতে আন্তঃব্যাংক ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেও চাঁদা তুলতেন। সেই টুর্নামেন্ট উদ্বোধন এবং সমাপনীতে উপস্থিত থাকতেন শেখ হাসিনা নিজেই। শীত-বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে কপাল খুলে যেত ব্যাংক খাতের এই চাঁদাবাজের। ছোট ব্যাংক থেকে ৫ কোটি এবং বড় ব্যাংক থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত চাঁদা তুলতেন তিনি। এসব কারণে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সবাই তাকে এ সেক্টরের আত্মস্বীকৃত চাঁদাবাজ হিসাবে জানতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজির কারণে ব্যাংকগুলোর সিএসআর (করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি) ফান্ডের ব্যয় অনেক বেড়ে যেত। ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম দোসর হিসাবে নজরুল ইসলাম মজুমদার বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
© All rights reserved
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট