1. shadhinsomoy.com@gmail.com : স্বাধীন সময় : স্বাধীন সময়
  2. info@www.shadhinsomoy.com : স্বাধীন সময় :
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১২:৫২ অপরাহ্ন

পরিবারের মুখে কুলুপ সন্ত্রাসী জিসান-সুব্রত বাইন দ্বন্দ্বে খুন যুবদল নেতা আরিফ?

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫

তেজগাঁও এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচি শেষে হাতিরঝিলে আড্ডা দিতে যান যুবদল কর্মী আরিফ শিকদার। ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের বাসায় ফেরার পথে আরিফকে ইয়াসিন ও আসিফ নামে দুই যুবক পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে ডেকে নিয়ে যান। পরে হাতিরঝিলের ঝিল ক্যাফের সামনে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষির পর তাকে কোপানো হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে পরে মুখে ও চোখে গুলি করে পালিয়ে যান তারা।

গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরদিন রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরিফ। ওই ঘটনায় আরিফের বোন রিমা আক্তার বাদী হয়ে হাতিরঝিল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আরিফ সিকদার ঢাকার ৩৬নং ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সহ-ক্রীড়া সম্পাদক। তিনি মাদারীপুর শিবচরের হোগলারমাঠ এলাকার গিয়াস উদ্দিন সিকদারের ছেলে। সোমবার (২১ এপ্রিল) আরিফের মরদেহ মাদারীপুরের শিবচরের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

আরিফকে কে বা কারা, কী কারণে হত্যা করল— জানতে চাইলে তার খালু মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা কিছুই জানি না।’ আরিফের খালা বলেন, ‘আমাদের জিজ্ঞেস কইরেন না। ঘটনাস্থলে যান, এলাকায় খবর লাগান। জানতে পারবেন।’

মগবাজার ও হাতিরঝিল এলাকায় এ ঘটনার খোঁজ নিলে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও মোল্লা মাসুদের সঙ্গে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের মধ্যে চলা দ্বন্দ্বের বলি হয়েছেন যুবদল কর্মী আরিফ শিকদার- সূত্রে জানা যাচ্ছে এমন তথ্য।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মো. ফারুক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা আসামি ধরার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ মার্চ রাতে রাজধানীর মগবাজারের টিঅ্যান্ডটি কলোনিতে গণপিটুনিতে রক্তাক্ত হন মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি। ওই গণপিটুনির একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভিডিওতে চিৎকার করে ওই ভুক্তভোগীকে পিটুনি দেওয়ার সময় বলতে শোনা যায়, ‘বল আর মাস্তানি করবি? কোথায় তোর পিস্তল? কোথায় তোর ফ্র্যাকচার গ্যাং?’

ওই ব্যক্তির রক্তাক্ত মুখে ১০ থেকে ১৫ জনের একটি গ্রুপ বারবার লাথি-ঘুসি মারে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণপিটুনির শিকার ব্যক্তির নাম মাহফুজুর রহমান ওরফে বিপু। তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের অনুসারী। সুব্রত বাইনের তৈরি করা ফ্র্যাকচার গ্যাং গ্রুপের ডান হাত বিপু।

ওই ঘটনার আগের রাত ৮টায় টিঅ্যান্ডটি কলোনিতে একদল লোক অস্ত্রের মহড়া দেন। সেখানে ছিলেন মাহফুজুর রহমান বিপুও। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন (৫ মার্চ) রাতেই মাহফুজুর রহমানকে গণপিটুনি দেয় শীর্ষ সন্ত্রাসী পলাতক জিসানের গ্রুপ। মূলত এর প্রতিশোধ নিতে ওঁত পেতে ছিল সুব্রত বাইনের গ্রুপ। ১৯ এপ্রিল রাতে হাতিরঝিলের ঝিল ক্যাফের সামনে আরিফের খুন হওয়ার ঘটনা এসব ঘটনারই ধারাবাহিকতা বলে ধারণা করা হচ্ছে।

একাধিক সূত্র জানা যায়, এ বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে সুব্রত বাইনের ক্যাশিয়ার মন্টুর নেতৃত্বে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে অস্ত্রের মহড়াকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া দ্বন্দ্বের কারণে গণপিটুনির শিকার হন বিপু। আর তার প্রতিশোধ হিসেবে আরিফ শিকদারকে হত্যা করে সুব্রত বাইনের ফ্যাকচার গ্যাং। কারণ, আরিফ শিকদার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের হয়ে কাজ করতেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মগবাজারের বিশাল সেন্টারে সুব্রত বাইনের আসা-যাওয়া শুরুর পর প্রাণ ফিরে পায় তার বাহিনী। সুব্রত বাইনের হয়ে কাজ করছেন- বিপু, মতিঝিলের বাপ্পি, মগবাজার ও বাংলামোটর যুবদলের মন্টু, সাজ, শরীফ, কামরুল ইসলাম রনি ও বাশার। বাইনের আর্থিক সব লেনদেন পরিচালনা করার কারণে দ্রুত ক্যাশিয়ার খ্যাতি পান মন্টু। ময়লা বাণিজ্য, ফ্ল্যাট দখল, ফুটপাত দখল, ইন্টারনেট ও ডিশ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে।

অন্যদিকে সন্ত্রাসী জিসান ও মোল্লা মাসুদ বাহিনীও এর মধ্যে মালিবাগের মৌচাক ও ফরচুন এই দুটি মার্কেটের দোকান দখলের পাঁয়তারা শুরু করেছে বলে জানা যায়। আবার এলাকায় বিভিন্ন টেন্ডার বাণিজ্যের কাজ জিসানের হাত ফসকে চলে যায় সুব্রত বাইনের হাতে। এখান থেকেই মূলত নতুন করে দ্বন্দ্ব শুরু দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে। এখানে মোল্লা মাসুদের অনুসারীরা জিসান গ্রুপকে সহযোগিতা করছেন।

আরিফ হত্যার ঘটনায় তার বোন রিমা আক্তার বাদী হয়ে গত ২০ এপ্রিল হাতিরঝিল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার দিন রাত প্রায় সাড়ে ১১টায় বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাতিরঝিলের আকিজের গলি থেকে হেঁটে মোড়ল গলি থেকে মধুবাগ ব্রিজের দিকে যাওয়ার সময় মো. ইয়াসিন ও মো. আসিফ হোসেন নামে দুজন যুবক এসে আরিফ সিকদারের কাঁধে হাত দিয়ে বলে, চাচা আমাদের সাথে আসেন কথা আছে। পূর্ব শত্রুতার জেরে অন্যান্য আসামিদের সহায়তায় পরিকল্পিতভাবে তাকে ঝিল ক্যাফের সামনে নিয়ে যায়। এরপর ইয়াসিন ও আসিফ আরিফকে কিলঘুষি মারতে থাকে। আসিফ চাকু দিয়ে আরিফের গলা বরাবর আঘাত করে। তখন আরিফ সিকদার মাথা সরিয়ে নেয়। সেই আঘাত আরিফের ডান পাশের ভ্রুর ওপর লেগে কেটে যায়। এরপর ইয়াসিন তার কোমর থেকে পিস্তল বের করে আরিফ সিকদারকে হত্যার উদ্দেশ্যে মুখে গুলি করে।

মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- প্রত্যক্ষ হামলাকারী মো. ইয়াছিন (১৯), মো. আসিফ হোসেন (২১), সুব্রত বাইনের ডান হাত বিপু (৫০), মো. অনিক (১৯), মো. মিরাজ (১৯), মো. আশিক (১৯), মো. ইফতি (২৪), সুব্রত বাইনের ক্যাশিয়ার জাফর ইমাম তরফদার মন্টু (৪০), রতন শেখ (৪৫), আলিফ(১৯)।

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও বাদী রিমা আক্তারের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

গতকাল সোমবার ঢামেক হাসপাতাল মর্গে আরিফের বাবা গিয়াস উদ্দিন সিকদার বলেন, ‘আমার ছেলেরে ডাইকা নিয়া গুলি করছে। জানি না কী জন্য কারা আমার ছেলেরে মারল। আমার একটাই ছেলে। আমার তো আর কেউ রইল না।’

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার(উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিবি পুলিশ এজাহার নামীয় অনিক নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে থানায় সোপর্দ করেছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার নেপথ্যের কারণ জানা যাবে।

হাতিরঝিল থানার ওসি মোহাম্মদ রাজু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আরিফ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। কাজ চলছে, আসামি ধরতে চলছে অভিযান।’

আসামিদের মধ্যে অন্তত তিনজন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের অনুসারী। ময়লা, ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসার দ্বন্দ্বের জেরে আরিফ খুন হলেন কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তাধীন।’

এদিকে জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গতিবিধির ওপর নজর রাখার জন্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

মঙ্গলবার যশোরে এক মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কিছু কিছু শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিন পেয়ে গেছে। তাদের দিকে আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে। তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে হবে। গোয়েন্দা বাহিনী যারা আছেন তাদের বেশি সতর্ক হতে হবে। এ ছাড়া কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
© All rights reserved
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট