উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষা, বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা ও জনস্বার্থে গবেষণার বিস্তৃত পরিসরে ২৮ বছরে পা রাখল বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ)। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা, রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধে উদ্ভাবনী গবেষণার মাধ্যমে জনকল্যাণে অবদান রাখা এবং প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক চিকিৎসা চালু করার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেছে আস্থা ও অর্জনের একটি ভিত্তি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যাশা— আগামী দিনে আরও কার্যকর গবেষণা, ডিজিটাল শিক্ষা, টেলিমেডিসিন ও বিশেষায়িত নার্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিএমইউ হবে দেশের স্বাস্থ্যখাত উন্নয়নের নেতৃত্বদানকারী কেন্দ্র।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সকাল থেকেই নানা আয়োজনে দিবসটি পালন শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ‘ইনোভেট, এডুকেট, এলিভেট ড্রিমস টু দ্য রিয়্যালিটি’ প্রতিপাদ্যে দিনব্যাপী ছিল র্যালি, আলোচনা সভা, গবেষণা অনুদান বিতরণ ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর মতো বর্ণাঢ্য আয়োজন। বিপ্লবোত্তর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গবেষণাকে জনকল্যাণমুখী ও বাস্তবভিত্তিক করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন বক্তারা।
সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এরপর বের হয় একটি বর্ণাঢ্য র্যালি, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ব্লক থেকে শুরু হয়ে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল হয়ে সি ব্লকের সামনে এসে শেষ হয়। দুপুরে এ ব্লকের মিলনায়তনে আয়োজিত হয় মূল আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। সভা পরিচালনা করেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, “গবেষণা যেন শুধু গবেষণার জন্য না হয়, তা হতে হবে সময়োপযোগী, বাস্তবধর্মী এবং জনকল্যাণমূলক। আমাদের গবেষণা থেকে এমন জ্ঞান বেরিয়ে আসা উচিত, যা নীতিনির্ধারণে সহায়ক হবে, নতুন ওষুধ ও ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সহায়তা করবে এবং সামগ্রিকভাবে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।”
তিনি বলেন, “বিএমইউ শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এটি হতে পারে দেশের স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নে পথনির্দেশক একটি প্রতিষ্ঠান। তাই গবেষণার মান এবং কার্যকারিতা—দু’দিকেই নজর দিতে হবে। গবেষণার ফলাফল কেবল জার্নালের পাতায় সীমাবদ্ধ না থেকে মানুষের জীবনে প্রতিফলিত হতে হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে বিএমইউ ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, “বিপ্লবোত্তর চেতনা আমাদের প্রেরণা। এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই আমরা বাংলাদেশের মানুষ ও রোগীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয়কে উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষা, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা এবং উদ্ভাবনমূলক গবেষণার ক্ষেত্রে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তুলতে চাই। এ লক্ষ্যে ই-লগবুক, টেলিমেডিসিন, ডিজিটাল রেকর্ড ব্যবস্থাপনা এবং বিশেষজ্ঞ নার্স তৈরির মতো আধুনিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বিএমইউ হবে জ্ঞান উৎপাদনের কেন্দ্র, যেখানে প্রতিটি গবেষণা মানুষের উপকারে লাগবে।”
প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা, শিক্ষার্থীদের জন্য সমন্বিত সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করা এবং গবেষণার জন্য অবকাঠামোগত সহায়তা বাড়ানো—এই তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আমরা আগামীর পরিকল্পনা সাজাচ্ছি।”
প্রো-ভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, “আমাদের গবেষণার ফোকাস হতে হবে স্বাস্থ্যব্যবস্থার সমস্যাগুলোর সমাধানে। বাস্তবসম্মত ও প্রয়োগযোগ্য, গবেষণায় বরাদ্দ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই।”
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে শহীদ ডা. মিল্টন হলে ৫৬ জন শিক্ষক ও চিকিৎসককে গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়। পাশাপাশি পূবালী ব্যাংকের সৌজন্যে দুটি নতুন স্টাফ বাস উদ্বোধন করা হয়। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, শিক্ষক, চিকিৎসক ও কর্মচারীদের আপ্যায়নের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ উৎসর্গ করা হয় সাধারণ রোগী ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও পুষ্টিকর খাবারের জন্য। জোহরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দেশ, জাতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, পরিচালক ও বিশিষ্ট শিক্ষকগণ, যাঁদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন, অধ্যাপক ডা. মো. শামীম আহমেদ, অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমান, অধ্যাপক ডা. মো. মনির হোসেন খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোছলেহ উদ্দীন, অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী, ডা. এরফানুল হক সিদ্দিকী প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অংশগ্রহণ করেন দিনব্যাপী এই আয়োজনে।
Leave a Reply