মহান বিজয় দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। বিজয়ের অনুভূতি সব সময়ই আনন্দের। তবে একই সঙ্গে দিনটি বেদনারও, বিশেষ করে যারা স্বজন হারিয়েছেন, তাদের জন্য। অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের; যেসব নারী ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তাদের। এ দেশের মানুষের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার তথা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সফল নেতৃত্ব দেন স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান। কোটি কোটি মানুষকে তিনি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে তুলেছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন একই লক্ষ্যে অবিচল একদল রাজনৈতিক নেতা। তাদের সবাইকেই আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। বিজয়ের আনন্দের স্বাদ সবচেয়ে আলাদা, তা বলাই বাহুল্য। আর তা যদি হয় পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার জয়, তবে সেই আনন্দ হয় বর্ণিল ও গৌরবের। আমরা সেই সৌভাগ্যবান জাতির একটি, যাদের আছে বিজয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হওয়ার দিন।
[caption id="attachment_5776" align="alignleft" width="300"] বিজ্ঞাপন[/caption]
তবে আজ আমাদের বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন, স্বাধীনতা অর্জনের পাঁচ দশক পেরিয়ে এসে আমরা কতটা এগিয়েছি, কী ছিল আমাদের লক্ষ্য ও প্রত্যাশা, পূরণ হয়েছে তার কতটা। কোথায় আমাদের ব্যর্থতা, কী এর কারণ। স্বাধীনতার অন্যতম লক্ষ্য যদি হয় ভৌগোলিকভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বা ভূখণ্ডের অধিকারী হওয়া, তাহলে তা অর্জিত হয়েছে। তবে শুধু এটুকুই মানুষের প্রত্যাশা ছিল না। পাকিস্তানের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে দেশে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তিসহ মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশাও ছিল ব্যাপকভাবে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের রায় মেনে না নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের দাবি প্রবল হয়ে ওঠে বাঙালির মধ্যে।
[caption id="attachment_5689" align="alignright" width="300"] বিজ্ঞাপন[/caption]
স্বাধীনতার পর দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলেও তা হোঁচট খেয়েছে বারবার। বজায় থাকেনি এর ধারাবাহিকতা। ফলে আজও প্রাতিষ্ঠানিকতা পায়নি গণতন্ত্র। রাজনীতিতে ঐকমত্যের অভাব ও অসহিষ্ণুতাও এর বড় কারণ। অন্তত জাতীয় ইস্যুগুলোয় সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ঐক্য থাকা প্রয়োজন হলেও কোনো শাসনামলেই তা দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে দেশের চেয়ে দলের স্বার্থই হয়ে উঠেছে মুখ্য। এটা সত্য-দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার প্রসার, নারী উন্নয়ন, শিশুমৃত্যুর হার কমানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে আমাদের। মাথাপিছু আয় বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই সরকারের দায়িত্ব বেড়েছে অনেক।
ভুলে গেলে চলবে না, এ দেশের মানুষ ধর্মের নামে সহিংসতা সমর্থন করে না। তা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সরকারকে মানবাধিকারের প্রশ্নে হতে হবে অঙ্গীকারবদ্ধ। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে সব বিভেদ ভুলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সেই ঐক্যের ভিত্তিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো আমরা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব-এ প্রত্যাশা সবার। আমাদের পাঠক, লেখক, শুভানুধ্যায়ীসহ পুরো দেশবাসীর প্রতি রইল মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ সোহেল মিয়া সরকারি, সম্পাদক : শামীম, বার্তা সম্পাদক : ইসমত প্রধান উপদেষ্টা : মোঃ পিন্টু
ঠিকানা : ২২৪ / ১ ফকিরাপুল, মতিঝিল ঢাকা-১০০০ মোবাইল : ০১৭৬৫৮৯৪১৭১