পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরের ‘সুবহান আল্লাহ’ মসজিদে ভারতের সামরিক বাহিনীর হামলায় মাওলানা মাসুদ আজহারের পরিবারের অন্তত ১০ সদস্য নিহত হয়েছেন। বুধবার মধ্যরাতের এই হামলায় তার আরও ৪ ঘনিষ্ঠ সহযোগীও নিহত হয়েছেন। পাকিস্তান-ভিত্তিক সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের (জেইএম) এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি খবর দিয়েছে।
পাকিস্তানি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন মাওলানা মাসুদ আজহার। তার এই সংগঠনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে জাতিসংঘ।
জইশ-ই-মোহাম্মদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মাসুদ আজহারের বড় বোন, তার স্বামী, তার ভাগ্নে, তার স্ত্রী, ভাগ্নী এবং তার পরিবারের পাঁচ সন্তান রয়েছে। এছাড়াও ভারতের হামলায় সুবহান আল্লাহ মসজিদে মাসুদ আজহারের ঘনিষ্ঠ আরও তিন সহযোগী নিহত হয়েছেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
মাসুদ আজহার বলেছেন, স্বজনদের মৃত্যুতে তার কোনও আফসোস কিংবা হতাশা নেই। বরং বারবার আমার মনে হচ্ছে, আমিও এই ১৪ সদস্যের সুখী কাফেলায় যোগ দিতে পারতাম। তাদের চলে যাওয়ার সময় এসেছিল। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা তাদের হত্যা করেননি। বাহাওয়ালপুরে নিহতদের জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য লোকজনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
২০০১ সালে ভারতের পার্লামেন্টে, ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে, ২০১৬ সালে পাঠানকোটে এবং ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার সঙ্গে মাসুদ আজহার জড়িত বলে অভিযোগ করে আসছে ভারত। ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মিরের পুলওয়ামায় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বন্দুকধারীদের হামলায় ভারতের আধা-সামরিক বাহিনী সিআরপিএফের ৪০ জওয়ানের প্রাণহানি ঘটে।
পুলওয়ামার এই হামলায় জইশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাওলানা মাসুদ আজহার ও তার ভাই আবদুর রউফ আসগর জড়িত বলে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। পুলওয়ামায় হামলার ঘটনার পরও চিরবৈরী এ দুই দেশের মাঝে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছিল। যদিও পরবর্তীতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এবং পাল্টা হামলার পর সেই উত্তেজনার অবসান ঘটে।
জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার দুই সপ্তাহ পর বুধবার মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরের অন্তত ৯টি স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী। ভারতীয় সামরিক বাহিনী মাত্র ২৫ মিনিটে অন্তত ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে পাকিস্তানে। এতে পাকিস্তানে কমপক্ষে ৭০ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত।
যদিও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বলেছে, ভারতের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। অন্যদিকে, কাশ্মির সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে ভারত-শাসিত কাশ্মিরে অন্তত ১০ জন নিহত ও ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতীয় অন্তত পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা জম্মু-কাশ্মিরে এখন পর্যন্ত তিনটি ভারতীয় বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন।
সূত্র: বিবিসি, এনডিটিভি।
Leave a Reply