পল্লী বিদ্যুৎ সংস্কার আন্দোলনে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি পুনর্বহাল ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ,পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হলে ২২ আগস্ট আরইবি এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রথম সভা ডাকা হয়। সেখানে আরইবির প্রতিনিধি উপস্থিত হননি। সমিতির প্রতিনিধিরা বিদ্যুৎ বিভাগে উপস্থিত হলে তাদের উপস্থিতি স্বাক্ষর গ্রহণ এবং আরইবি অনুপস্থিত থাকায় পরবর্তীতে সভা আয়োজনের পত্র দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানালে বিদ্যুৎ বিভাগ নিষ্ক্রিয় থাকে। আলোচনায় বসার দাবিতে আমরা ২৪ আগস্ট ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে গণছুটি কর্মসূচি ঘোষণা করা করি। পরে ২৭ আগস্ট আরইবির চেয়ারম্যানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় রিফর্ম কমিটির কার্যক্রম শুরু করার আশ্বাস দেওয়া হয়। সদ্য ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ অর্থনৈতিক ভঙ্গুর অবস্থায় বন্যা কবলিত হয়ে পড়লে মানবিক দৃষ্টিতে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করি।
ইতোমধ্যে ৯ সেপ্টেম্বর আরইবির নির্বাহী ও সহকারী প্রকৌশলীদেরকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপকেন্দ্রগুলোর ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা উল্লেখ করে আরইবি থেকে সেনাসদরে পত্র প্রেরণ করা হয়, যা এই সিস্টেমে প্রথম। এছাড়াও একই সময়কালে আরইবি ঠিকাদারের জনবলকে উপকেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যক্রম গ্রহণ করে। এরপরে রিফর্ম কমিটির পরপর চারটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু দেখা যায় সভায় যা আলোচনা হয় কার্যবিবরণীতে তা আসে না, বরং এমন সিদ্ধান্ত আসে যা আলোচনাই হয়নি। এ অবস্থায় ৩০ সেপ্টেম্বর সারা দেশে পল্লী বিদ্যুতের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রাহক সেবা চালু রেখে ঢাকা প্রেস ক্লাব ও ৬১ জেলার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন এবং মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রেরণ করেন। স্মারকলিপির দাবি জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৫ এর এজেন্ডা হিসেবে গৃহীত হয় এবং আরইবি-পবিস একীভূত করার দাবিটি যৌক্তিক হওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বাস্তবায়নের নিমিত্তে বিদ্যুৎ বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এসময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর আস্থা রেখে আমরা আর কোনো কর্মসূচি দিইনি। কিন্তু ৩০ সেপ্টেম্বরের মানববন্ধনে উদঘাটন হওয়া ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে হঠাৎ করেই গত বছরের ১৬ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাইকোর্টের একটি কর্মসূচি থাকা সত্ত্বেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে বিশেষ গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ মদদে ১৫-১৬ জন ব্যক্তি সমন্বয়ক পরিচয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সদর দপ্তরের মূল ফটকের সামনে মানববন্ধন করে আমাদেরকে অপসারণ ও শাস্তি দাবি করেন। অথচ মানববন্ধনকারী কেউই যাদের শাস্তির দাবি করেছেন তাদের কাউকে চিনতেন না বা কোথায় কাজ করেন জানতেন না। ১৬ অক্টোবর এবং ১৭ অক্টোবর এই দুই দিনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১৭১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে রাষ্ট্রবিরোধী ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা ও ২৪ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। মামলায় মোট ১৬ জনকে আটক ও রিমান্ডে নেওয়া হয়। ৬৩ জনকে ১৭ অক্টোবর পরবর্তী এক সপ্তাহে সাময়িক বরখাস্তসহ বিভিন্ন শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। আন্দোলনের যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রজনতা এবং বিভিন্ন সচেতন নাগরিকরা গণমাধ্যমে কথা বলা শুরু করলে ২৩ অক্টোবর আরইবি-পবিস বিদ্যমান কাঠামো পর্যালোচনাপূর্বক সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে সরকার একটি জাতীয় কমিটি গঠন করে।
সরকারের জাতীয় কমিটি গঠনের পর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদস্যরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফিরে যায়। এসময়েও ১৭ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৫৬ জনকে সাময়িক বরখাস্তসহ বিভিন্ন শাস্তি প্রদান করা হয়। আরইবির কর্মকর্তারা বিভিন্ন সমিতিতে গিয়ে হুমকি-ধামকিসহ নানা প্রকার নিপীড়ন চালাতে থাকেন। আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করার পরেও আরইবির এমন দমন-পীড়নে অসহায় হয়ে তা বন্ধ এবং নির্বিঘ্নে কাজ করার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। মামলা, চাকরিচ্যুতি, শাস্তি ইত্যাদি হুমকি চলমান থাকলে পুনরায় ১৫ নভেম্বর সমিতির আন্দোলনের সমন্বয়করা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করলেও ১৬ নভেম্বর আবারও একজন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যারা জুলাইয়েও বিগত সরকারের উন্নয়নবিরোধী হিসেবে সাসপেন্ড ও বদলিসহ সংযুক্ত হয়েছেন, জুলাইয়ের পর তাদেরই আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে যাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ন্যূনতম সংযোগ নেই, ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং সেই সুযোগ নিয়ে আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়, মিথ্যা মামলা করা হয়।
বক্তারা আরও বলেন, স্বয়ং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদ্যুৎ বিভাগের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছে। সরকারের সংস্কারের পক্ষে নেওয়া প্রতিটি পদক্ষেপে আমরাও অত্যন্ত আশাবাদী। অথচ এই সংস্কারের কথা বলতে গিয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক সমিতির যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং মামলা দেওয়া হয়েছে, তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জুলাই স্পিরিট ধারণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি পুনর্বহাল এবং মামলা প্রত্যাহার করে বিদ্যুতের মতো একটি সংবেদনশীল খাতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করতে সরকার এবং এর সঙ্গে যুক্ত সবপক্ষের প্রতি আমাদের আবেদন রইল।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ সোহেল মিয়া সরকারি, সম্পাদক : শামীম, বার্তা সম্পাদক : ইসমত প্রধান উপদেষ্টা : মোঃ পিন্টু
ঠিকানা : ২২৪ / ১ ফকিরাপুল, মতিঝিল ঢাকা-১০০০ মোবাইল : ০১৭৬৫৮৯৪১৭১