রাজশাহীর ব্যবসায়ী হোসেন আলীকে কারাগারে পাঠিয়ে তার ব্যাংক হিসাব থেকে শুধু ৩৭ লাখ টাকাই তুলে নেওয়া হয়নি; দুটি প্রাইভেটকারও দখলে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া কারাগারে থাকা অবস্থায় একের পর এক মামলায় নাম দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার একটি বাড়ির ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ নেওয়া হয়েছে। তার গাড়ি দুটি বর্তমানে ছাত্রদল ও যুবদলের দুই নেতা ব্যবহার করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী।
শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে হোসেন আলী এসব তথ্য জানান। হোসেন আলীর অভিযোগ, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মাহমুদ হাসান শিশিল (৩৫), দুই ম্যানেজার মাহমুদ হাসান লিমন (২৮) ও তন্ময় হোসেন (৩১) ১০ আগস্ট তার গাড়িতে দেশীয় অস্ত্র ও দুই বোতল ফেনসিডিল রেখে ধরিয়ে দেন। ওই সময় তার কাছে থাকা চেক নিয়ে পুলিশের সহায়তায় জাল স্বাক্ষরে তিনটি ব্যাংক থেকে ৩৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা তারা তুলে নিয়েছে।
জেল থেকে বেরিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি এসব ঘটনায় তিনি আদালতে মামলা করেছেন। এ নিয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি দৈনিক যুগান্তরে ‘রাজশাহীতে ব্যাংক জালিয়াতি, কারাবন্দি ব্যবসায়ীর ৩৭ লাখ টাকা উধাও’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। হোসেন আলী দাবি করেন, তাকে মামলায় ফাঁসিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনায় মাহমুদ হাসান শিশিল ও মাহমুদ হাসান লিমন ছাড়াও নগর যুবদলের দপ্তর সম্পাদক সফিকুল মোহাম্মদ তন্ময় জড়িত আছেন। মাহমুদ হাসান লিমন রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব। তন্ময় ও লিমনই এখন তার দুটি গাড়ি ব্যবহার করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি যখন জেলে তখন লিমন, সনি ও তন্ময়সহ কয়েকজন আমার বাসায় যায়। তারা সেখান থেকে আমার নামে বায়না করা দুটি বাড়ির কাগজপত্র, প্লটের ব্যবসার কাগজপত্র নিয়ে যায়। এর কিছুদিন পর আমার ছোট ভাই হানিফকে ধরে নিয়ে যায় এবং গাড়ির চাবি চায়। হানিফ তখন শিশিলকে ফোন করে বিষয়টি জানান। এ সময় শিশিল বলেন, ‘ভালো চাও তো দিয়ে দাও।’ পরে আমার ভাড়া করা পার্কিং থেকে দুটি গাড়ি তারা বের করে নিয়ে যায়। বর্তমানে গাড়ি দুটির একটি ব্যবহার করছেন যুবদল নেতা তন্ময়। অন্যটি ব্যবহার করছেন ছাত্রদল নেতা লিমন।’
হোসেন জানান, নতুন এক মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য তাকে আদালতে তোলা হলে সেখানে তন্ময়, শিশিল ও লিমন তার সঙ্গে দেখা করে বলেন, তার বাড়ির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি তাদের নামে দিতে হবে। তা না হলে একের পর এক নতুন মামলা হতেই থাকবে। তিনি কোনোদিন বের হতে পারবেন না। মামলা থেকে বাঁচতে তিনি ওই কাগজে স্বাক্ষর করে দেন। তারপর জামিনে বের হলেও ভয়ে এলাকায় থাকতে পারছেন না। তিনি এখনও আত্মগোপন করে থাকছেন।
হোসেন আলীর গাড়ি নিয়ে গিয়ে ব্যবহার করার অভিযোগের বিষয়ে লিমন বলেন, ‘হোসেন আমাদের আমদানি-রপ্তানির ব্যবসার ম্যানেজার হিসাবে কাজ করত। সে মাত্র ৭ হাজার টাকা বেতন পেত। সে কীভাবে দুটি গাড়ির মালিক হলো? তার কোনো গাড়ি আছে কি না তা আমার জানা নেই। সে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।’
যুবদল নেতা তন্ময় বলেন, ‘হোসেন আমার বন্ধু শিশিলের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত। সে আমার বন্ধুর অনেক টাকা মেরে দিয়েছে। তাই আমি আমার বন্ধুকে একটু সহযোগিতা করেছি। সে কারণে হয়তো আমার নাম বলছে। আসলে তার কোনো গাড়ির বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
Leave a Reply