কক্সবাজারের মহেশখালীতে ছয় বছরের এক কন্যাশিশুকে কেক ও চকলেট দেওয়ার প্রলোভনে বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার পর লাশ গুমের ঘটনায় আসামি মোহাম্মদ সোলেমানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রায় দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মোহাম্মদ ওসমান গনি এ রায় ঘোষণা করেন।
২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর স্কুল থেকে ফেরার পথে শিশুটিকে অপহরণ করে নিজ ঘরে নিয়ে যায় সোলেমান। সেখানে নির্মমভাবে ধর্ষণের পর হত্যা করে এবং লাশ গুম করে ফেলে। হত্যার পরও পরিবারকে ফোনে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
সেদিনই নিখোঁজের ঘটনায় পরিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পরবর্তীতে তদন্তে অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত হলে শিশুর বাবা অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মুক্তিপণের কল ট্র্যাক করে ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর পুলিশ সোলেমান ও তার স্ত্রীকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ না মেলায় স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হলেও সোলেমানকে আসামি করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মীর মোশাররফ হোসেন টিটু জানান, আদালত সোলেমানকে শিশু আইন ২০০০ এর ৭ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, একই আইনের ৮ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং শিশু আইন ২০০০ এর ৯(২) ধারায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দিয়েছেন।
সব সাজা পর্যায়ক্রমে কার্যকর হবে এবং মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে ‘মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার’ নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আইনজীবী মীর মোশাররফ বলেন, এ ধরনের নৃশংস ঘটনার শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ডই হতে পারে। রায়ের ফলে সমাজে শক্ত বার্তা যাবে—এভাবে শিশু ধর্ষণ ও হত্যার মতো অপরাধ করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরও জানান, সোলেমান এর আগেও নিজের স্ত্রীকে হত্যা করেছিলেন। বিচারক পর্যবেক্ষণে বলেছেন—এ রকম আসামিকে যদি মৃত্যুদণ্ড না দেওয়া হয়, তবে সে ভবিষ্যতে আরও হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে, যা সমাজের জন্য ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।
শিশুটির পিতা আদালতের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, আমার মেয়েকে কেক-চকলেট খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে এ ঘটনা ঘটায়। আজ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো। আদালতের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।
Leave a Reply