জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. হাবিবুল্লাহ আল মেজবাহর সঙ্গে শিশুর চিকিৎসা নিয়ে শিশুটির বাবা জেলা যুবদলের সাবেক সদস্য সচিব মুক্তাদুল হক আদনানের বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখেছিলেন চিকিৎসক ও নার্সরা। এতে দুই ঘণ্টা ধরে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে রোগীদের। খবর পেয়ে হাসপাতালে উপস্থিত হন জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফরোজা আকতার চৌধুরী, পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব, সিভিল সার্জন মুহা. রুহুল আমিন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন প্রমুখ।
হাসপাতাল ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শিশুর কপালে ক্ষত অবস্থায় মুক্তাদুল হক আদনানের স্ত্রী সকাল ১০টার দিকে শিশুটির চিকিৎসার করাতে জরুরি বিভাগে আসেন। সে সময় জরুরি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন ডা. হাবিবুল্লাহ আল মেজবাহ। চিকিৎসক সেখানে সেলাই দিতে চান। তখন মুক্তাদুল হক আদনান আসবেন বলে স্ত্রী একটু অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর শিশুর কপালে কসমেটিক সেলাই দিতে বলা হয়। তখন চিকিৎসক তাদের বলেন কসমেটিক সেলাই আপনারা বোঝেন। এটি করতে ওটি রুমে নিয়ে যেতে হবে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর হাসপাতালের সকল চিকিৎসক সেবা বন্ধ করে দেন। একই সময় হাসপাতালের নার্স ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সেবা বন্ধ করেন। খবর পেয়ে প্রশাসন-পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। তারা উভয় পক্ষের কথা শোনেন। একপর্যায়ে চিকিৎসকদের দাবির প্রেক্ষিতে মুক্তাদুল হক আদনানকে পুলিশ সদর থানায় নিয়ে যান।
দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারকসহ তার কক্ষে চিকিৎসকদের সঙ্গে ডিসি আফরোজা আকতার চৌধুরী, এসপি মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব, সিভিল সার্জন মুহা. রুহুল আমিন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেনসহ সংশ্লিষ্টরা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সোয়া ১২টার দিকে বৈঠক শেষ হয়।
সরেজমিনে জানা যায়, এ ঘটনা ঘটার পর মুক্তাদুল হক আদনানকে হাসপাতালে আটকে রাখা হয়। পরে তত্ত্বাবধায়কের সাথে বৈঠকের সময় তাকে থানায় নেওয়া হয়। এ সময় তত্ত্বাবধায়ক কক্ষ এলাকার বিভাগের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দরজার বাহির থেকে হাসপাতালে কর্মরত স্টাফ, নার্স ও ইন্টার্ন নার্সরা বিচার দাবিতে স্লোগান দেন। এ ঘটনায় সোয়া দুই ঘণ্টা ধরে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল। পরে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে চিকিৎসাসেবা শুরু করা হয়। হাসপাতালে অনাকাঙিক্ষত ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
মুক্তাদুল হক আদনানকে পুলিশ থানায় নিয়ে যাওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আদনানের স্ত্রী পুলিশ সুপারের সামনে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, আমার বাচ্চার চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসেছিলাম। কসমেটিক সেলাই, ওটি নিয়ে চিকিৎসক নানা রকম কথা বলেন। একপর্যায়ে তিনি আমার নখে আঘাত করেন। তখন আমার স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন স্ত্রীর গায়ে হাত দিলেন কেন? আমার স্বামী আগে উত্তেজিত হননি। আমার গায়ে হাত দেওয়ার পর তিনি রেগে যান। একজন চিকিৎসক এমন করতে পারেন না। উনারা এখানে যা অভিযোগ করছেন তা মিথ্যা।
রুদ্ধদার বৈঠক শেষে কর্মকর্তারা বের হয়ে যান। এ সময় জানতে চাইলে কোনো কর্মকর্তা কথা বলেননি। বৈঠকের পর জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক বলেন, ঘটনাটি নিয়ে নিউজ না হোক এটিই সকলে চান। অযথা বিশৃঙ্খলা না হোক সেটা কেউ চাচ্ছে না। আমরা সেভাবে এগোচ্ছি। এক পক্ষে তো বিচার হবে না? তদন্ত করে দেখে যেটা হবে সেটা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে এমনটা বলে গেছে। আমরা ওই ডাক্তারকে আলাদা রেখেছি। আমরা চেষ্টা করছি ঠান্ডা মাথায় সব ঠিক করার জন্য।
জয়পুরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ আল মামুন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালের কেউ এখনো থানায় অভিযোগ করেননি। মুক্তাদুল হক আদনান থানায় রয়েছে। অভিযোগ না করলে তাকে ছেড়ে দিতে হবে।
Leave a Reply