জুলাই অভ্যুত্থানে নারীরা ছিলেন সামনের সারিতে। তাদের আর হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। সংসদে নারীর জন্য ৫০ ভাগ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে প্রতিটি দলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেছেন আলোচকরা। বৈঠকের শুরুতে সংসদে নারী আসন নিয়ে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজনীন আখতার। সঞ্চালনা করেন সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন।
বৈঠকে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, তিনি বহু বছর ধরে নারীর অধিকার আদায়ের লড়াই করছেন। ২০০৭ সালে আরপিওতে রাজনৈতিক দলের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্তির বিধান প্রণয়ন এবং স্থানীয় সরকারে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ৪০ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের আইন করার উদ্যোগের কথা তিনি তুলে ধরেন। তবে সরকারের অনুমোদন না পাওয়ায় তখন হাজার হাজার নারী নেতৃত্ব তৈরির ঐতিহাসিক সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে।নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেন, আমরা নারীকে যদি সুযোগ না দিই, দরজাটা খুলে যদি না দিই এবং দরজার বাইরে রাখব বলে যদি ঠিক করে বসে থাকি, তাহলে নারী দেখব না। নারীকে দেখার চোখটা বন্ধ রাখলে হবে না। বিকেন্দ্রীকরণে আমরা খুব জোর দিয়েছি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, চাপ সৃষ্টি করতে বলা হচ্ছে আমাদের (নারীদের), তাহলে কাদের চাপে পড়ে, কোন দিকে হাঁটছে এই সরকার? নারীর ক্ষমতায়নের জায়গাটা কোন দিকে যাবে, সেটি নিশ্চয়ই বিবেচনা করতে হবে ঐকমত্য কমিশনকে।
তিনি বলেন, ৫০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব না থাকলে নারীরা আরও পিছিয়ে যাবে। সব রাজনৈতিক দলকে মানানোর দায়িত্ব পালন করতে হবে ঐকমত্য কমিশনকে। আমরা দাবি করেছি যে আপনারা অনতিবিলম্বে বসেন।
নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির বলেন, সংসদে নারীর জন্য ৫০ ভাগ প্রতিনিধিত্ব চাইতে আমরা ভয় পাই কেন। এ জন্য প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে চাপ দেওয়া উচিত।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, যখনই সমান অধিকারের কথা বলি, তখনই একটা হুঙ্কার আসে। অনেক দিন ধরে সরাসরি নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। এখন যে ৫ শতাংশ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তা হাস্যকর।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের বড় জায়গা জাতীয় সংসদ। সেখানে নারীর প্রতিনিধিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটি হতেই হবে। তিনি সংসদের আসন বাড়িয়ে ৪০০ করা এবং সেখানে নারীর জন্য ১৫০ আসন সংরক্ষণের কথা বলেন। পাশাপাশি তিনি নির্বাচনে নারীর সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির দাবি জানান।
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, জাতীয় সংসদে নারীর জন্য পাঁচ শতাংশ আসন রাজনৈতিক দলগুলো সংরক্ষিত রাখার মনোভাব প্রকাশ করেছে। এই দয়াদাক্ষিণ্য কেন? পোশাক খাতে রেমিট্যান্স কারা দেয়? নারীর ৫০ শতাংশের বেশি অবদান আছে। সেখানে ৫ শতাংশ কেন বুঝতে পারছি না।
Leave a Reply