রংপুরের কাউনিয়ায় নিখোঁজের ৪১ দিন পর টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে চার বছরের এক শিশুর গলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের পর আজ শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তিনজনকেই গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ধর্মেশ্বর গ্রামের নুরুল ইসলাম (৪৫), তার ছেলে মামুন মিয়া (১৯) ও একই গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে মোসন মিয়া (৫৬)।
মরদেহ উদ্ধার ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে কাউনিয়া থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) মোস্তফা কামাল বলেন, আজ শুক্রবার শিশুটির বাবা দেলওয়ার হোসেন বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বৃহস্পতিবার রাতে আটক হওয়া তিনজনকে আজ গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এদিকে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
মোস্তফা কামাল জানান, গত ১৭ জানুয়ারি উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ধর্মেশ্বর গ্রামের দেলওয়ার হোসেনের মেয়ে দোলা মনি (৪) বাড়ির বাইরে খেলা করার একপর্যায়ে নিখোঁজ হয়। এ ব্যাপারে ওইদিন কাউনিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। কিন্তু ৪০ দিন পেরিয়ে গেলেও শিশুটির সন্ধান পায়নি স্বজনরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বজনরা নিখোঁজ শিশুটির সন্ধান চেয়ে কাউনিয়া-পীরগাছা সেনা ক্যাম্পে আবেদন করেন। পরে সন্ধ্যার দিকে সেনাবাহিনী ধর্মেশ্বর গ্রামে অভিযান চালিয়ে নুরুল ইসলাম ও তার ছেলে মামুন মিয়াকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। দুইজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাতে ধর্মেশ্বর গ্রামে আফজালের বাড়ির পেছনে টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে শিশু দোলা মনির গলিত মরদেহ উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নুরুল ইসলাম ও তার ছেলে মামুন মিয়া এবং সহযোগী সোমন মিয়াকে আটক করা হয়। পরে তিনজনকেই থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে সেনাবাহিনী।
শিশুটির পরিবারের বরাত দিয়ে ওসি জানান, প্রায় এক বছর আগে দেলওয়ারের স্ত্রীর সঙ্গে নুরুল ইসলামের স্ত্রীর কাপড় সেলাইয়ের পাওনা টাকা নিয়ে ঝগড়া হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পরিবার কারও সঙ্গে কেউ কথা বলে না। এক বছর আগের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে নুরুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে ১৭ জানুয়ারি দোলা মনিকে একা পেয়ে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধ এবং মাটিতে আছাড় মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে মরদেহ বস্তায় ঢুকিয়ে বাড়ির পেছনে কচুর ঝোপে লুকিয়ে রাখে এবং পরে রাতের অন্ধকারে আফজালের বাড়ির পেছনে টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে শিশু দোলা মনির মরদেহ ফেলে ঢাকনা লাগিয়ে দেয়।
শিশুটির মা রূপা বেগম অভিযোগ করে জানান, তার শিশু মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর তারা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু পুলিশ মেয়ের সন্ধান না করে উল্টো তার চরিত্র নিয়ে তদন্ত করে।
রূপা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, থানা পুলিশের ওপর ভরসা না পেয়ে তিনি সেনাক্যাম্পে জানানোর পর সেনাবাহিনী তার মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে। অথচ পুলিশ শুধু শুধু সময়ক্ষেপণ করে গেছে।
শিশুটির বাবা দেলওয়ার হোসেন জানান, তার মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর বাড়িতে চিঠি পাঠিয়ে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল। অথচ নুরুল ও সহযোগীরা পরিকল্পনা করে তার মেয়েকে হত্যা করেছে। তার মেয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানান তিনি।
জানতে চাইলে কাউনিয়া থানা পুলিশের ওসি এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা নিখোঁজ শিশুটির সন্ধানে চেষ্টা করেছি। সন্দেহের তালিকায় নুরুল ইসলামকে থানায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি স্বীকার করেননি। পরে সেনাবাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে ঠিকই নুরুল হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
Leave a Reply