ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ব্যারিকেড দিয়ে রামদা হাতে ডাকাতির চেষ্টার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় ওই ডাকাতদলের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মুন্সীগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ।
বুধবার (৭ মে) মুন্সীগঞ্জ গোয়ান্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইশতিয়াক আশফাক রাসেল এসব তথ্য জানান।
এর আগে মঙ্গলবার (৬ মে) রাত ২টার দিকে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের ওমপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। চালকের দক্ষতায় রামদা হাতে ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা পান ওই গাড়ির আরোহীরা।
ঘটনার সময় গাড়ির একটি ড্যাসবোর্ড ক্যামেরায় পুরো ঘটনাটি রেকর্ড হয়। ভিডিওটি মঙ্গলবার বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক্সপ্রেসওয়েতে রাস্তা বন্ধ করে ওৎ পেতে থাকা ডাকাতরা একটি গাড়ি আসতেই বড় রামদা নিয়ে গাড়িটির দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। কিন্তু গাড়িচালক ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে না গিয়ে দ্রুত গাড়িটি নিয়ে কেটে পড়তে সমর্থ হয়। হাফপ্যান্ট পরিহিত কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছয়জন ডাকাত গাড়িটিকে ধরতে না পেরে একটি রাম দা গাড়ির দিকে ছুঁড়ে মারেন।
মুন্সীগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ (ওসি) ইশতিয়াক আশফাক রাসেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পরে বিকেল ৪টার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়।
প্রেস বিফ্রিংয়ে মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসূল আলম সরকার বলেন, গত ৫ মে রাত দেড়টার দিকে মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার ভদ্রাসন গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে মো. রবিউল আলম (৩০) তার এক প্রতিবেশী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকেসহ মোট চারজনকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য নিজের গাড়িতে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হন। রাত ২টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর এলাকায় তিনি রাস্তার ওপর বেশ কিছু ছনের আটি দিয়ে তৈরি করা একটি ব্যারিকেড পান। তিনি গাড়ি থামাতেই রাস্তার নিচ থেকে দেশীয় ধারালো অস্ত্র (ছেন-দ্য) নিয়ে ছয়জন ডাকাত অস্ত্র উঁচিয়ে গাড়িতে আক্রমণ করতে ছুটে আসে। সে সময় ড্রাইভার পালিয়ে যেতে চাইলে ডাকাত দল অস্ত্রসহ গাড়ির দিকে ধাওয়া করে। গাড়িটিকে ধরতে ব্যর্থ হয়ে তারা অস্ত্র ছুড়ে মারে। এই ঘটনার ভিডিও পুরো কার্যক্রম ক্যামেরায় রেকর্ড হয়। যা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।
পুলিশ সুপার প্রেস বিফ্রিংয়ে আরও জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ ঘটনাটি অবগত হওয়ার পর গোয়েন্দা পুলিশ গত ৬ মে দুপুর থেকে আজ ৭ মে দুপুর দুইটা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা জেলার বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত ডাকাতদের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রশস্ত্র এবং ঘটনার সময় তাদের পরিহিত পোষাক উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা সবাই ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার টিলা গ্রামের ফজর আলীর ছেলে মো. কামাল ওরফে সিএনজি কামাল (৪০), একই উপজেলার নয়া ভাঙ্গুনি গ্রামের খলিল সরদার এর ছেলে মো. ইসমাঈল সরদার, মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার আওলিয়ার চর গ্রামের কাঞ্চন বেপারীর ছেলে রমজান বেপারী (২৭), পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার উত্তার চাকামায়া গ্রামের শাহ আলম মোল্লার ছেলে রাসেল মোল্লা ও মাদারীপুর সদর উপজেলার আদিতাপুর গ্রামের সারোয়ার হোসেনের ছেলে মো. লিমন মাতব্বর (২০)।
উল্লেখ্য, ডাকাতদলের নেতা মো. কামাল ওরফে সিএনজি কামাল (৪০) তার দলের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে একইভাবে ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী স্থানে এক্সপ্রেসওয়েতে একটি ডাকাতি সংঘটিত করেছিল। সে সময় তারা ভিকটিমের মূল্যবান স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়সাসহ একটি লাইসেন্সকৃত অস্ত্র ডাকাতি করে নিয়ে যান। সেই ঘটনায় শ্রীনগর থানার মামলা নাম্বার-২৩ তারিখ-২৭/০৯/২০২৪ইং ধারা-৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড রুজুর পর ঘটনা উদঘাটনপূর্বক আসামিদের গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা হয়। সম্প্রতি আসামিরা উক্ত মামলায় জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় একইভাবে এই অপরাধ সংঘটিত করে। প্রেস বিফ্রিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ কাজী হুমায়ূন রশীদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মো. ফিরোজ কবির জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ ইশতিয়াক আশফাক রাসেল প্রমুখ।
Leave a Reply