দিল্লিতে দুই দশক ধরে শ্রমিকের জীবন কাটানো পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের মেয়ে সোনালি বিবি আজ আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বাংলাদেশে কারাগারে। সঙ্গে আছেন তার স্বামী দানিশ শেখ ও আট বছরের ছেলে। অভিযোগ—তারা ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—যাদের হাতে ভারতীয় পরিচয়পত্র ছিল, যাদের শিকড় বীরভূমে, তারা কীভাবে হঠাৎ বাংলাদেশে বন্দি হলেন?
ঘটনার শুরু দিল্লিতে। ২৬ জুন সোনালি ও তার পরিবারকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। প্রায় একই সময়ে বীরভূমেরই আরেক নারী সুইটি বিবি ও তার দুই নাবালক ছেলেকেও আটক করা হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়। অর্থাৎ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের বাংলাদেশে পুশব্যাক করে দেয়। এরপর তারা কিছুদিন ঢাকায় ফুটপাথে দিন কাটিয়েছেন। তারপর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আশ্রয় নেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি—গত সপ্তাহে বাংলাদেশ পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলে এবং জেল হাজতে পাঠায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানিয়েছেন, ‘তারা আসাম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। আদালতে হাজির করা হয়েছে। যেহেতু নারী ও শিশু আছে, আমরা যথাসম্ভব সম্মান ও সহানুভূতির সঙ্গে বিষয়টি সামলাচ্ছি।’ তবে আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ মাইগ্র্যান্ট লেবার ওয়েলফেয়ার বোর্ডের চেয়ারম্যান ও তৃণমূল সাংসদ সমীরুল ইসলাম বলেছেন, ‘এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা পরিবারগুলোর পাশে আছি। আইনিভাবে এবং কূটনৈতিকভাবে লড়াই চালিয়ে যাব।’
এদিকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার পর সোনালি ও সুইটিদের অসহায় আর্তি—‘আমাদের বাঁচান, আমরা ভারতীয়।’ তবু কেউ শোনেনি তাদের কথা।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কা এখন সোনালির অনাগত সন্তানকে নিয়ে। পরিবার ও আত্মীয়রা প্রশ্ন তুলছেন, যদি শিশুটি বাংলাদেশে জন্ম নেয়, তবে তার নাগরিকত্ব কী হবে? ভারতীয় নাকি বাংলাদেশি—না কি একেবারেই রাষ্ট্রহীন?
এ ঘটনায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর বক্তব্য প্রকাশ্যে আসেনি। ভারতীয় আগ্রাসনের কারণে ঘোর অনিশ্চয়তায় পড়েছেন সোনালি–সুইটিদের মতো সাধারণ শ্রমিক পরিবার। আদালতের পরবর্তী শুনানি ১০ সেপ্টেম্বর। তার আগে তাদের মুক্তি বা ফেরত আসার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
Leave a Reply